ডিজিটাল বেঙ্গল, মালদা, ৯ মেঃ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী বিল স্বাক্ষর করে আইনে প্রবর্তন করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৷ তারপর থেকে এই সংশোধিত আইনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে এই সংশোধিত আইন বাতিলের দাবিতে হিংসার ঘটনাও ঘটেছে৷ মালদা জেলার সংখ্যালঘু সমাজও এই আইনের বিরোধিতা করছে৷ শেষ পর্যন্ত এই আইনের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে মালদা জেলা মোতুয়ালি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন৷
ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে তার রিট পিটিশন জমা পড়েছে৷ গত ৫ মে সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল৷ কিন্তু সেই শুনানি হয়নি৷ আগামী ১৫ মে সুপ্রিম কোর্টের নতুন ডিভিশন বেঞ্চে মামলার প্রথম শুনানি হবে ৷
পেশায় আইনজীবী তথা এই সংগঠনের সম্পাদক শামিম আনিস জানাচ্ছেন, মুসলিমদের দান করা প্রতিটি সম্পত্তি ওয়াকফ এস্টেটের অধীনে৷ প্রতিটি ওয়াকফ স্টেট আবার ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে৷ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আলাদা আলাদা ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে৷ সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড প্রতিটি রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডকে পরিচালনা করে৷ প্রতিটি ওয়াকফ সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড মোতুয়ালি নিয়োগ করে৷ যাঁরা সম্পত্তি ওয়াকফ করেছেন, সেই সম্পত্তি যদি কেউ ওয়াকফ ডিড করেন, তাতে তিনি বলে দিতে পারেন, তাঁর ওয়াকফের মোতুয়ালি কারা হবেন৷ সেই মোতুয়ালিরা ওই দান করা সম্পত্তিকে দাতার ইচ্ছে অনুযায়ী পরিচালনা করেন৷ কিন্তু যেসব ওয়াকফ এস্টেটের মোতুয়ালি নেই, সেখানে বোর্ড সরাসরি মোতুয়ালি নিয়োগ করে।
তিনি আরও জানান, মোতুয়ালি মানে হল কেয়ারটেকার বা ম্যানেজার ৷ সরকার পরিচালিত ওয়াকফ বোর্ড মোতুয়ালি নিয়োগ করে ৷ মালদা জেলায় মোট ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ কত, তার নিখুঁত কোনও ডেটা সরকারের কাছে নেই৷ সরকার সেটা প্রকাশও করে না ৷ আমাদের শুধুমাত্র একটা ধারণা দেওয়া হয়৷ সরকারের তরফে আমাদের যে ডেটা দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৩৮৫ টি রেজিস্টার্ড ওয়াকফ এই জেলায় রয়েছে৷ কিন্তু নন রেজিস্টার্ড ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে এর প্রায় দ্বিগুণ৷ সবমিলিয়ে এখানে ৮০০টিরও বেশি এস্টেট রয়েছে৷ মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় তিন হাজার বিঘা ৷ তবে বাস্তবে এর থেকেও বেশি সম্পত্তি এই জেলায় রয়েছে ৷ নতুন সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আমরা দেশের শীর্ষ আদালতে মামলা করেছি ৷
মালদা জেলা ওয়াকফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি মাজিদুর রহমান বলছেন, আমরা মনে করি মালদা জেলায় যত ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, আমরা তার অভিভাবক৷ ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছি৷ কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে আঘাত করার কথা মাথায় রেখেই নতুন এই সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাশ করেছে৷ কেন্দ্র বলছে, মুসলিমদের উন্নয়ন সেভাবে এগোয়নি৷ কিন্তু উন্নয়নই যদি এই আইন সংশোধনের মাপকাঠি হয়, তবে ১৯৯৫ সালের যে আইন ছিল, তার পরিকাঠামোতেই উন্নয়ন করার অনেক জায়গা ছিল৷ সরকার বলছে, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে৷ আমরাও সেটা স্বীকার করে নিচ্ছি৷ কিন্তু আমরা মনে করি, ১৯৯৫ সালের আইনে সেই দুর্নীতি রোধ করার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড ও সরকারের হাতে রয়েছে৷ নতুন আইনে কেন্দ্রীয় সরকার নন রেজিস্টার্ড ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে চালাকি করেছে।
One thought on “Waqf Act | ওয়াকফ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মালদার মোতুয়ালিরা”