Mango | আমের ফলনে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মালদা

mango of malda

ডিজিটাল বেঙ্গল, মালদা, ২৮ মেঃ বাংলায় এখন পুরোদস্তুর আমের (Mango) মরশুম। কলকাতা থেকে মফস্বল বা গ্রাম, বাজারে গেলেই ঢালাও আমের দেখা মিলছে। সেই আমের দাম  কতটা আম আদমির নাগালের মধ্যে সে তর্ক ভিন্ন। তবে মোটামুটিভাবে দেখা যাচ্ছে, গোলাপখাস প্রায় শেষের পথে। ফলের ডালা ভরে আছে হিমসাগরে। আর তারই মধ্যে দিয়ে কোথাও উঁকি মারছে লক্ষণভোগ , কোথাও সবুজ রঙের ল্যাংড়া।

রাজ্যের উদ্যান পালন সূত্রে খবর, ২০২৫ সালে বাংলায় আমের মোট ফলন হয়েছে প্রায় ৯ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ফলনের পরিসংখ্যান বলছে, এবারও হিমসাগর আমের ফলন হয়েছে সর্বাধিক। প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। তার পর দু’নম্বরে রয়েছে ল্যাংড়া। এই আমের ফলন হয়েছে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। তিন নম্বরে রয়েছে আম্রপালি। এই আমের ফলনের পরিমাণ ১ লক্ষ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন।

আমের জেলা বলে মালদার একটা আলাদা পরিচিতি রয়েছে। এবারও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে জেলা। এবার রাজ্যের মধ্যে আম উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করেছে মালদা। জেলায় মোট ফলনের পরিমাণ প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন। তার মধ্যে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন হিমসাগর আমের ফলন হয়েছে। ৯০ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্মণভোগ আম ফলেছে।সেই সঙ্গে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন ল্যাংড়া আমের ফলন হয়েছে এই জেলায়।

মুর্শিদাবাদে উৎপাদিত হয়েছে ২০৮.৩৫ হাজার মেট্রিক টন আম। এই জেলাতেও সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে হিমসাগর আমের। ৭৪.৫৫ হাজার মেট্রিক টন হিমসাগরের ফলন হয়েছে মুর্শিদাবাদে। আম্রপালি আমের ফলন হয়েছে ২৪.৯৮ হাজার মেট্রিক টন। এছাড়াও এখানে ফজলি, বোম্বাই এবং লক্ষণভোগের মতো জাতের ফলনও হয়েছে।

নদিয়ায় ফলন হয়েছে প্রায় ৬৭.৩৪ হাজার মেট্রিক টন আমের। এই জেলার ফলনের একটি বড় অংশই এসেছে হিমসাগর এবং ল্যাংড়া-বোম্বাই মিশ্র প্রজাতি থেকে। উত্তর ২৪ পরগনায় উৎপাদন হয়েছে ৪৯.৩ হাজার মেট্রিক টন, যার মধ্যে হিমসাগর এবং আম্রপালি উল্লেখযোগ্য। বাঁকুড়ায় ৩৮.৬৩৩১ হাজার মেট্রিক টন এবং হুগলিতে ৩৪.২২৫ হাজার মেট্রিক টন আমের ফলন হয়েছে।

প্রতিযোগিতার পরিসংখ্যানে ঢুকে পড়ার পর একবার দেখে নেওয়াই যেতে পারে, বাংলায় আম কত রকমের হয়। তার ইতিহাসই বা কী।

বাংলায় মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলা আম উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য। চিনা পর্যটক হিউয়েন সাংয়ের (৬৩২-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ) ভ্রমণ কাহিনীতেই গৌড়ের আমের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বাংলায় আম-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে নবাব ও নিজামদের হাত ধরে। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ১৭০৪ সালে রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করে সেখানেই আমবাগান তৈরি করেন। তাঁর সেই আমবাগান পাহারা দেওয়ার জন্য থাকত সশস্ত্র প্রহরী।

মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত আমের প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে রানি, ভবানি, চম্পা, বিমলি, মোলমজাম, আনারস, গোলাপখাস, শাহদুল্লা, ইনায়াত পসন্দ এবং কোহিতুর। এ সব নামকরণের নেপথ্যেও অনেক লোককথা রয়েছে। চম্পা আমের গন্ধ ফুলের মতো বলে তাই তার নাম ওরকম। বিমলি-র নামকরণ এক পরিচারিকার নামে, তিনিই এই নতুন জাত উদ্ভাবনে সাহায্য করেন। মোলমজাম অনেকটা ল্যাংড়ার মতো খেতে, তবে স্বাদে আরও ভারসাম্যপূর্ণ। শাহদুল্লা প্রায় হিমসাগরের মতো। কোহিতুর অত্যন্ত সংবেদনশীল, তুলোয় মুড়ে রাখতে হয়। প্রতিটি ফলের দাম পড়ে ৫০০ টাকা –৭০০টাকা।

মালদার বিখ্যাত আমগুলি হল লক্ষণভোগ, গোপালভোগ, ফজলি, ল্যাংড়া ও হিমসাগর। ফজলি আম সবথেকে বড় হয়। একেক্টি আমের ওজন ওজনে ৭০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর গন্ধ অতুলনীয়। ফজলি, লক্ষণভোগ ও হিমসাগর তথা খিরসাপা্নদএই তিনটি আম মালদহ জেলার  জি আই ট্যাগ পেয়েছে।

নদিয়ায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয় হিমসাগর ও আম্রপালির। এছাড়া কিছুটা চাষ হয় গোলাপখাস, সিন্দুরী, চ্যাটার্জি ও ল্যাংড়া জাতের। হিমসাগরের দু’টি ভ্যারাইটি এখানে পাওয়া যায়ব্ল্যাক হিমসাগর ও হোয়াইট হিমসাগর ।

হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলাতেও হিমসাগর, ল্যাংড়া, কাঁচা-মিঠা ও বোম্বাই আমের ভাল উৎপাদন হয়। বাংলায় এখন আম্রপালি ও মল্লিকা আমের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, কারণ এই জাতের গাছে কম সময়েই ফল আসে।

Kamal Hasan | রাজ্যসভার সাংসদ হতে চলেছেন কামাল হাসান

One thought on “Mango | আমের ফলনে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মালদা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *