ডিজিটাল বেঙ্গল, হরিশ্চন্দ্রপুর, ২২মেঃ ভারত-পাক যুদ্ধ আবহে এখন বিরতি৷ অপারেশন সিঁদুর চলার সময় কাশ্মীরে কাজে গিয়ে নিখোঁজ মালদার এক কিশোর শ্রমিক। ১৩ দিন ধরে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে ওই কিশোরের পরিবারের৷ বিষয়টি জানতে পেরেই নিখোঁজ ওই পরিযায়ী শ্রমিককে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছেন জেলাশাসক ৷
নিখোঁজ ওই কিশোর পরিযায়ী শ্রমিকের নাম আসফাক হক(১৭)৷ হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাটিওন গ্রামে তার বাড়ি৷ বাবা আকবর আলি পেশায় কৃষক৷ মা রেহেনা বিবি ঘরের কাজকর্ম সামলান৷ বাড়িতে রয়েছে আরও দুই ভাই-বোন৷ মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার৷ অতিরিক্ত উপার্জনের আশায় বছর দুয়েক আগে থেকেই আসফাক ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যায়৷ তিন সপ্তাহ আগে কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ করতে কাশ্মীর রওনা দেয় সে৷ কিন্তু সে ঠিক কোথায় কাজ করছিল, তা জানেন না অভিভাবকরা ৷
কাশ্মীরে পৌঁছোনোর তিনদিন পরেই শুরু হয়ে যায় অপরাশন সিঁদুর পরবর্তী অধ্যায়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ৷ পাক সেনাবাহিনী ও জঙ্গিরা বারবার ভারতে হামলার চেষ্টা করতে থাকে৷ পালটা জবাব দিতে থাকেন ভারতীয় জওয়ানরা ৷ আসফাক যেখানে ছিল, সেখানে প্রতি রাতে দুই থেকে তিনবার ব্ল্যাক আউট করা হত বলে জানা গিয়েছে ৷ ১২ দিন আগে মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার৷ মাকে সে জানিয়েছিল, ওখানে খুব সংকটের মধ্যে রয়েছে সে৷ খাবারের খুব অভাব৷ সে কাজ বন্ধ রেখে বাড়ি ফিরে যাবে৷ রেহেনা বিবিও ছেলেকে ঘরে ফিরে আসতে বলেন৷ কিন্তু সেই শেষবার৷ তারপর থেকে আর আসফাকের সঙ্গে কেউ কোনও যোগাযোগ করতে পারেননি ৷
রেহানা বিবি জানান,ছেলে এবার ঢালাইয়ের কাজ করতে গিয়েছিল৷ ও এর আগেও কাশ্মীরে কাজে গিয়েছিল৷ তবে এবারই প্রথম ও ঢালাইয়ের কাজে যায়৷ ২০ দিন আগে ও কাশ্মীর গিয়েছিল৷ ১২ দিন আগে ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছে৷ তারপর থেকে ও নিখোঁজ৷ আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই৷ ওর মোবাইলে বারবার ফোন করছি। মেসেজ করছি৷ কিন্তু ওর ফোন সুইচ অফ৷ ওর সঙ্গে যুদ্ধের দিনই শেষ কথা হয়েছে৷ ও বলেছিল, ওখানে যুদ্ধ চলছে৷ ওই জায়গায় থাকতে পারবে না৷ ও বাড়ি ফিরছে৷ আমিও ওকে বাড়ি ফিরে আসতে বলি৷ আর ওর সঙ্গে কথা হয়নি ৷ ছেলেকে নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় আছি৷ আমি সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমার ছেলেকে উদ্ধার করে দিন৷ আর কথা বলতে পারেননি রেহানা ৷ এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি ৷
নিখোঁজ শ্রমিতের বাবা আকবর আলি জানাচ্ছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার ৩-৪দিন আগে কাশ্মীর গিয়েছে ছেলে৷ ১০-১২ দিন আগে ও ফোন করে জানায়, ওখানে যুদ্ধ চলছে৷ গুলি-গোলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে৷ বলেছিল, ওখানে আর থাকা যাবে না৷ খাবার পাচ্ছে না ৷ বাড়ি ফিরে আসবে ৷ তারপর থেকেই ওর আর হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ অনেক জায়গায় ফোন করেছি ৷ কেউ ওর সন্ধান দিতে পারেনি ৷ সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমার ছেলেকে খুঁজে দিক৷ এখানে কাজ নেই ৷ তাই বাইরে গিয়েছিল ৷ এবার ছেলে ফিরে এলে ওকে আর কাশ্মীর যেতে দেব না ৷ অন্য কোথাও কাজ করলে করবে ৷
গোটা বিষয়টি হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের বিডিওকে জানিয়েছেন আকবর আলি৷ বিডিও তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, ছেলেকে ফিরিয়ে আনা হবে৷ জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া জানান, বিষয়টি জানতে পেরে বিডিও ওই শ্রমিকের বাড়িতে গিয়েছেন৷ আমি বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কাশ্মীর প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি৷ শ্রম দফতরের তরফেও আসফাকের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷ আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমরা আসফাককে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারব৷
এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য তজমুল হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনাটি জেনেছি। আমি এই মুহূর্তে এলাকার বাইরে৷ হরিশ্চন্দ্রপুর ফিরে এ নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব৷ এমন ঘটনা ঘটে থাকলে ওই শ্রমিককে ঘরে ফিরিয়ে আনতে সবরকম চেষ্টা করব৷
One thought on “Worker | কাশ্মীরে নিখোঁজ হরিশ্চন্দ্রপুরের নাবালক পরিযায়ী শ্রমিক”