ওয়েব ডেস্ক, ডিজিটাল বেঙ্গল, ১৬ মেঃ বেলা থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পর রাতে চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভ যখন থামতে চাইছে না, তখনই তাদের ছত্রভঙ্গ করতে তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করল পুলিশ। বিকাশ ভবনে আটকে পড়া সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সকলকে বের করে আনতে পুলিশ কড়া হাতে বিক্ষোভকারী চাকরিহারা শিক্ষকদের সরিয়ে দিল। বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে বিকাশ ভবনে আটকে পড়া সরকারি কর্মচারী ও অন্যান্যদের বের করে আনা হয়।
বেলা বারোটার পর থেকে বিকাশ ভবনের সবকটি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন চাকরিহারা বিক্ষোভকারী শিক্ষকেরা। ধাপে ধাপে সেখানে পুলিশের সংখ্যা বাড়ে। অভিযোগ, রাত আটটার পরে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। অনেক শিক্ষক রাস্তায় শুয়ে পড়েন। তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। যারা বিকাশ ভবনে আটকে পড়েছিলেন, তাদেরকে ধাপে ধাপে বের করে আনা হয়। তবে রাত ১০টার পরেও বিকাশ ভবনে উত্তেজনা থামেনি। সেখানে বারবার লাঠিচার্জ হয়েছে। চাকরিহারাদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই পুলিশের মারে জখম হলেও অ্যাম্বুলেন্স মেলেনি।
এদিকে বিকাশ ভবনের সামনে সাংবাদিক সম্মেলন করে শুক্রবার গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা। একইভাবে যতক্ষণ না তাদের দাবি পূরণ হচ্ছে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। ঠিক তেমনি তৃণমূল বিধায়ক সভ্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আরজিও জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চাইলে তাতে চাকরিহারাদের পরামর্শ বা আলোচনার জায়গা রাখতে হবে বলেও তারা দাবি করেছেন। যদি তা না হয় তাহলে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন।
যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের আহ্বায়ক মেহেবুব মণ্ডল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আমাদের সমস্যার কথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে বলে বলে আমরা ব্যর্থ। আমরা চাই দ্রুত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুক। শুধু প্রতিশ্রুতি নয় তা যেন যথাযথ পূরণ হয় তার আশ্বাসও দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। অন্যথা নতুন করে আমরা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে দেব না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করুন। কিভাবে বিজ্ঞপ্তি হবে, সে ক্ষেত্রে আমাদেরও মতামত এবং পরামর্শ থাকতে হবে।
এদিকে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মুখ খুলেছেন। সিপিআই (এম এল) লিবারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পার্থ ঘোষ বলেন, এরাজ্যের সরকার এবং এসএসসি শিক্ষাক্ষেত্রে যে চরম দুর্নীতি করেছে আজ তার দায় বহন করতে হচ্ছে হাজার হাজার কর্মরত শিক্ষক,শিক্ষিকাকে। এঁদের পেশাগত নিশ্চয়তা সুনিশ্চিত করতে কয়েকমাস ধরে মুখ্যমন্ত্রী বারংবার প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি বিলি করেছেন। কিন্তু শিক্ষকরা যে অন্ধকারে ছিলেন,সেখানেই রয়ে গেছেন। চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজ হাজার হাজার যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকাও শিক্ষা কর্মীরা।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের দুর্নীতির কারণে তাঁরা চাকরি জীবনে চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছেন। যাঁদের জন্য তাঁদের চাকরি জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে, তাঁদেরকেই এই অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। আমরা দেখলাম,এই আন্দোলন বানচাল করতে স্হানীয় বিধায়ক এবং বিধাননগর পৌরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্তের ইঙ্গিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষক, শিক্ষিকাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এই তৃণমূল নেতার পোষা গুণ্ডাবাহিনী। এদের হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষকের রক্ত ঝরেছে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষকদের দাবি ,মুখ্যমন্ত্রীকে স্বয়ং বিকাশ ভবন এসে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে। চাকরি জীবনে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষকদের এই দাবি অত্যন্ত যথাযথ । এরাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বশীল হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীকেই বর্তমান অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তার অবসান করতে অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে এবং সমাধানসূত্র বার করতে হবে।
Mamata Banerjee: চাকরিহারা গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের জন্য নয়া প্রকল্প, মাসে মাসে মিলবে অনুদান
One thought on “Teachers’ Protest | শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ”