Lychee | কালিয়াচকে লিচুর দামে হাত পুড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের

Lychee

ডিজিটাল বেঙ্গল, কালিয়াচকঃ দিন কয়েক পরেই জামাইষষ্ঠী৷ আম আর লিচু ছাড়া সেই পার্বণ নাকি অচল৷ বাঙালি মায়েদের সেটাই কথা৷ তবে এবার জামাই বাবাজিরা ষষ্ঠীর দিন শ্বশুরবাড়িতে আদৌ জেলার রসালো লিচুর স্বাদ পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে যথেষ্টই৷ কারণ, এই মুহূর্তে কালিয়াচকের ফল বাজারে লিচু কিনতে প্রতিটির জন্য দিতে হচ্ছে তিন থেকে চার টাকা৷ ব্যবসায়ীদের কথায়, দিন যত যাবে, লিচুর দামও তত বাড়বে ৷

মালদা জেলায় কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে লিচুর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি৷ মূলত গুটি ও বোম্বাই প্রজাতির লিচু এই এলাকায় চাষ করা হয়৷ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন কারণে লোকসানের ধাক্কা সামলাচ্ছেন লিচুচাষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা৷ চলতি বছর লিচুর মুকুল বেশ ভালোই এসেছিল৷ ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন, এবার অন্তত লাভের মুখ দেখতে পাবেন ৷ কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি৷ সময়মতো বৃষ্টির অভাব ও তার জেরে কীটপতঙ্গের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েন চাষিরা৷ ফলে মুকুল এলেও বেশিরভাগ ফুল ঝরে যায়৷ চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এবার মাত্র ২০ শতাংশ বাগানে লিচু উৎপাদন হতে পারে ৷

কালিয়াচকের লিচু ব্যবসায়ী রাজু শেখ জানালেন, এবার লিচুর দাম খুব বেশি ৷ আমরা পাইকারি দরে লিচু কিনি ৷ এবার ২৮০০-২৯০০ টাকা হাজার দরে আমাদের লিচু কিনতে হচ্ছে৷ দাম বেশি থাকায় বিক্রিও এবার কম৷ এত দাম দিয়ে কেউ লিচু কিনতে চাইছেন না৷ প্রতিটি লিচুর জন্য ক্রেতাদের তিন থেকে চার টাকা খরচ করতে হচ্ছে ৷ এবার লিচুর উৎপাদন কম৷ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফলন হবে কি না সন্দেহ রয়েছে ৷ তাতেই দাম বেড়েছে ৷ লিচু বাইরে যেতে শুরু করলে দাম আরও বাড়বে।

আরেক লিচু বিক্রেতা সাহিল শেখ বললেন, এ’বছর লিচুর উৎপাদন অনেক কম৷ আমি ২৬০০-২৭০০ টাকা হাজার দরে লিচু কিনে হাজার প্রতি 2900-3000 টাকা দরে বিক্রি করছি৷ প্রতি হাজারে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা উপার্জন হলেই আমাদের যথেষ্ট ৷ এখনও ঠিকমতো লিচু পুষ্ট হয়নি ৷ বাইরেও খুব কম যাচ্ছে৷ কয়েকদিন পর থেকে ভিনরাজ্যে লিচু পাঠাব৷ এবার লিচু কিনতে ক্রেতাদের সত্যিই খুব কষ্ট হবে৷ উৎপাদন ভালো থাকলে আমরা একেকজন এখানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার লিচু বিক্রি করি৷ এখন দুই থেকে তিন হাজারের বেশি বিক্রি করতে পারছি না৷ একটি লিচুর দাম অন্তত তিন টাকা হয়ে যাচ্ছে৷ এখানে আমরা ৩৫-৪০ দিন ব্যবসা করি ৷ এবার মনে হচ্ছে অতদিন ব্যবসা করা যাবে না।

কালিয়াচক মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ নাজিমুদ্দিন জানান, প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্যই এবার লিচুর ফলন অনেক কম৷ বৃষ্টির অভাবে মুকুল শুরুতেই ঝরে গিয়েছিল ৷ এখন দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরাফেরা করলেও রাতে সেটা ২৬-২৭ ডিগ্রিতে নেমে আসছে৷ তাপমাত্রার এই তারতম্য লিচুর পক্ষে ভালো নয় ৷ এবার ২০ শতাংশ ফলন হবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে৷ লিচুর দাম এবার কমার কোনও সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না৷ বরং সময়ের সঙ্গে দাম আরও বাড়বে৷ জামাইষষ্ঠীর বাজারে প্রতিটি লিচুর দাম পাঁচ টাকাও হতে পারে ৷

এবারের মরশুমে লিচুর ফলন নিয়ে চিন্তিত জেলার উদ্যান পালন দফতরের কর্মী ও আধিকারিকরাও৷ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক জানাচ্ছেন, বিরূপ আবহাওয়ায় এবার জেলায় লিচু চাষের খুব ক্ষতি হয়েছে৷ তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব এখনও আমাদের কাছে নেই ৷ সবেমাত্র লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে ৷ ইতিমধ্যেই দাম আকাশ ছুঁয়েছে৷ আমাদের আশঙ্কা, এবার লিচুর দাম আরও বাড়তে পারে৷

Police Officer | অপরাধে রাশ টানতে পুলিশ আধিকারিকের নতুন পদ তৈরি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *