ডিজিটাল বেঙ্গল, কোচবিহার, ৩০ এপ্রিলঃ ভোট বড় বালাই। কত কী যে করতে হয় নেতাদের! যেমনটা করলেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তাঁকে মঞ্চের ওপর করতাল বাজিয়ে পুরোহিতদের সঙ্গে হরিনাম সংকীর্তন করতে দেখা গেল। তবে শুধু অভিজিৎ নন, দলের অন্য নেতাদেরও একই অবস্থায় মঞ্চে দেখা যায়। যদিও তৃণমূলের এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। সেসবে অবশ্য কান দিতে নারাজ দলের জেলা সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘রাজ্যের নির্দেশ পুরোহিত সম্মেলন হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো যদি হিন্দু ভোট পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে, তাহলে আমরাও হতে পারি। এতে অসুবিধা কোথায়?’
এদিন দলের জেলা নেতৃত্বের তরফে রবীন্দ্র ভবনে পুরোহিত সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নেন পাঁচ শতাধিক পুরোহিত। তাঁদের সবাইকে নামাবলি পরানোর পর একটি করে গীতা উপহার দেওয়া হয়।এরপর পুরোহিতদের একটা অংশ মঞ্চের ওপর হরিনাম সংকীর্তন এবং বেদ পাঠ করেন। মঞ্চে পুরোহিতদের সঙ্গে হরেকৃষ্ণ গানের সঙ্গে করতাল বাজিয়ে নাচেন অভিজিৎ।
তাঁর ভাষণেও পুরোহিতদের কাজের বিষয়ই উঠে আসে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এইসব কর্মসূচির মাধ্যমে পুরোহিতদের মন জয় করে তৃণমূল হিন্দুদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। পরে পুরোহিতদের সঙ্গে নিয়ে নগরকীর্তনেও বের হন অভিজিৎ। নগরকীর্তন শেষে পুরোহিতদের তামার পাত্রে ভোজন করানো হয়।
সম্প্রতি মালদা, মুর্শিদাবাদ, পহলগামের ঘটনায় হিন্দু ভোট নিয়ে কিছুটা আশঙ্কায় ভুগছে তৃণমূল। এর মধ্যে চাপ বাড়িয়েছে সুিপ্রম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়া। এদিকে, আবার সামনের বছরই বিধানসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে দিঘায় জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বন্ধ ঘরের হঠাৎ দরজা খুলে যাওয়ার মতো। ভোটব্যাংকে আরও হিন্দু ভোট ভরতে জগন্নাথই ভরসা ঘাসফুল শিবিরের।
কোচবিহার জেলায় মোট নয়টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। বর্তমানে এর মধ্যে বিজেপির দখলে রয়েছে ছয়টি বিধানসভা। অপরদিকে, তৃণমূলের বিধায়ক রয়েছেন মাত্র তিনজন। দলীয় সূত্রে খবর, প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়া নয়, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে হিন্দু ভোটকে। কারণ, তাদের ধারণা নির্বাচনে পোলারাইজেশন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটা হলে যে ফলাফল কোনওভাবেই তাদের পক্ষে যাবে না, সেটা বুঝেছে তৃণমূল।
আর সেই লক্ষ্য পূরণে রাজ্যের নির্দেশে কোচবিহারে এদিনের পুরোহিত সম্মেলন। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা সম্প্রদায়কে তোষণ করে আসছিলেন। এই অবস্থায় মালদা, মুর্শিদাবাদ ও পহলগামের ঘটনায় হিন্দু ভোট নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। তাই হিন্দু ভোট পাওয়ার জন্য এখন তাঁর দলের নেতা–নেত্রীরা পুরোহিতদের সঙ্গে নগরকীর্তনে বের হচ্ছেন। কিন্তু এসব করে লাভ হবে না।’ হিন্দু ভোট কোনওভাবেই তৃণমূলের পক্ষে যাবে না বলে তাঁর মত।